ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

জুনের মাঝামাঝিতে উয়েফা ইউরো-২০২০ প্রতিযোগিতার সময়, পর্তুগিজ ফুটবল খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো টেবিলে থাকা কোকাকোলার দুটি বোতল সরিয়ে ফেলেছিলেন এবং তার বদলে পানির বোতল রেখেছিলেন। এই বিষয়টি কোকাকোলার শেয়ারে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আধা ঘন্টা পরে, এর শেয়ার ১.৬% কমে গিয়েছিল। কোকা-কোলার বাজার মূল্যও হ্রাস পেয়েছে: এর প্রস্তুতকারকরা $৪ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কোকা-কোলা অস্বীকার করেছে যে ক্রিস্টিয়ানোর পদক্ষেপ তাদের শেয়ারের পতনের দিকে পরিচালিত করেছে। তবুও, অন্যান্য ফুটবল খেলোয়াড়রা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে অনুসরণ করে একটি ফ্ল্যাশ মব শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, ফরাসি ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড় সংবাদ সম্মেলনের সময় একটি হেনিকেন বিয়ার তার থেকে দূরে রেখে দেন।

মিশেল ওবামা

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রীকে অনেকেই ফ্যাশন আইকন মনে করেন। তার অনবদ্য রূচি এবং বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহ তাকে ফ্যাশন শিল্পে বড় প্রভাবক করে তুলেছে। তিনি বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য যে ব্র্যান্ডগুলি বেছে নেন সেসবের স্টকের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সর্বদা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে তিনি জনসাধারণের মধ্যে একটি সসী পোষাক পরিধান করে হাজির হন যা বিশেষভাবে ডোনাটেলা ভার্সেস তার জন্য তৈরি করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি হিসেবে এটি ছিল তার সর্বশেষ ডিনার। সেই সন্ধ্যায়, তিনি $১১,০০০ ডলার মূল্যের একটি পোশাক পরিধান করে সবাইকে চমকে দেন। তার পোষাকের এই রুচি অলক্ষিত থাকেনি। সজাগ বিনিয়োগকারীরা তাড়াহুড়ো করে ভার্সেস ব্র্যান্ডের কোম্পানি ক্যাপরির শেয়ার কিনেছে। এটির শেয়ারের মূল্য প্রায় ৫% বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্লেষকরা এই বৃদ্ধির নাম দিয়েছিলেন 'মিশেল মার্কআপ'।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বড় কোম্পানিগুলোর প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। তার প্রতিটি আক্রমণের জন্য কোম্পানিগুলোকে লাখ লাখ ডলার খরচ গুনতে হয়েছে। সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৬ সালে। ট্রাম্প টুইট করেছিলেন যে "বোয়িং ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্টদের জন্য একটি নতুন ৭৪৭ এয়ার ফোর্স ওয়ান তৈরি করছে, কিন্তু এটির খরচ নিয়ন্ত্রণের বাইরে, $৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। অর্ডার বাতিল করুন!" ফলস্বরূপ, কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য $২ ডলার কমে যায়। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়, ট্রাম্প তার টুইট দিয়ে অনেকবার এন্টারপ্রাইজের বাজার মূলধনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তার কুখ্যাত টুইটের কারণে লকহিড মার্টিন এবং টয়োটা যথাক্রমে $৩.৫ বিলিয়ন ডলার এবং $১.২ বিলিয়ন ডলার লোকসান গুনেছে।

কাইলি জেনার

ইন্সটা মডেল এবং ব্যবসায়ী কাইলি জেনার এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী মহিলাদের তালিকায় আছেন। তাকে আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২৪৫ মিলিয়নেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এবং টুইটারে ২৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তাকে অনুসরণ করে। এটা খুব কমই আশ্চর্যজনক যে স্ন্যাপচ্যাট সম্পর্কে তার টুইটটি ২০১৮ সালে এত বড় সাড়া পেয়েছে - যেটাতে প্রায় ৩৫০,০০ লাইক এবং ৬৭,০০০ মন্তব্য ছিল। জেনার তার পাঠকদের একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন করেছিলেন। "আর কেউ কি স্ন্যাপচ্যাট খুলবে না?" তিনি তার টুইটার অনুসারীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন। "নাকি এটা শুধু আমি...উহ এটা খুবই দুঃখজনক।" সুতরাং, কাইলি জেনার এককভাবে স্ন্যাপের বাজার মূলধন থেকে $১.৩ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দিয়েছিল। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬% এর বেশি কমেছে।

এলন মাস্ক

টেসলার সিইও আমাদের সময়ের অন্যতম প্রধান ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে বিবেচিত। তার টুইটগুলি শেয়ার বাজারের পাশাপাশি ক্রিপ্টো বাজারে ক্ষমতার ভারসাম্যকে অনেকবার পরিবর্তন করেছে। টেকনো কিং-এর প্রভাব এতটাই আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে যে মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মাস্ককে আইনজীবীদের অনুমতি ছাড়াই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে তার কোম্পানির নাম উল্লেখ করার কারণে নিষিদ্ধ করেছে। এর আগে, এলন মাত্র একটি পোস্ট দিয়ে স্যামসাংয়ের শেয়ারের দাম ৮% এর বেশি কমিয়ে দিয়েছিল এবং একই সাথে তিনি প্যানাসনিকের শেয়ারের দাম ৩% এরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন যে ব্যাটারি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্যানাসনিক একমাত্র কোম্পানি যাদের টেসলা সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।

অপরাহ উইনফ্রে

২০১৫ সালে, এই মার্কিন টিভি তারকা ওজন কমানোর প্রোগ্রাম তৈরি করে এমন একটি কোম্পানি ওয়েট ওয়াচারে ১০% অংশীদারিত্ব অর্জন করেছিলেন। উইনফ্রে $৪৩ মিলিয়ন ডলারের মোট বিনিয়োগের জন্য শেয়ারপ্রতি $৬.৭৯ ডলার করে কিনেছিলেন। যখন তিনি টুইটারে এই খবরটি শেয়ার করেন, তখন কোম্পানির স্টকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, "আমি এই প্রোগ্রামে এতটাই বিশ্বাস করি যে আমি কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এর বিবর্তনের অংশীদার,"। দুই দিনের মধ্যে, ওয়েট ওয়াচারের স্টকের মূল্য ১৩০% এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। উইনফ্রে সক্রিয়ভাবে ওয়েট ওয়াচারের পরিষেবা এবং পণ্যগুলির প্রচার করেছিলেন। কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য তিন বছর ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। অপরাহ তার বিনিয়োগ থেকে ভাল অর্থ উপার্জন করতে পেরেছিলেন। তবে তার সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় ছিল চূড়ান্ত ফলাফলে: বিখ্যাত এই টিভি হোস্ট ২৮ কেজি ওজন কমিয়েছেন। কোম্পানিটির ডায়েট প্রোগ্রামগুলিকে ধন্যবাদ।

হিলারি ক্লিনটন

২০১৫ সালে, যখন হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তখন টুরিং ফার্মাসিউটিক্যালসকে ঘিরে একটি বাজে কেলেঙ্কারি হয়েছিল। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা আছে এমন ওষুধ তৈরির অধিকার অর্জন করেছিল। একই সাথে কোম্পানিটি অবিলম্বে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ডারাপ্রিম যা ইমিউন সিস্টেম ডিজঅর্ডারের রোগীদের জন্য নির্ধারিত, এর দাম ৪০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হিলারি ক্লিনটন এটি সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সময়ে, টুরিং এর স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন করা হয়নি, কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বক্তব্য ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল।